The Alumni Association of NDBMM School

(Registered Alumni Association of Government Sponsored School)

প্রাক্তনী সমিতি - নারায়ণ দাস বাঙ্গুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুল

(সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় চালিত বিদ্যালয়-এর নিবন্ধিত প্রাক্তনী সমিতি)
Registration No. S0013684

স্কুলের প্রথম দিনটা আর শেষ দিনটা একই ছিল, চোখের জল ফেলেছিলাম দুই দিনই, কিন্তু কারণটা ছিল একেবারে আলাদা - একটা যাবার আনন্দ; আরেকটি বিদায়ের ব্যথা।...    জীবনের বোঝা বইতে গিয়ে আজ বুঝতে পারি - ছোটবেলার সেই স্কুলব্যাগটা মোটেই ছিল না ভারী!...

About The Alumni

প্রাক্তনী সমিতি নিয়ে কিছু কথা


'আমাদের স্কুল' শব্দবন্ধটির মধ্যে কি জানি কি এক জাদু লুকিয়ে আছে। মনে পড়লেই আমরা হারিয়ে যাই সেই ফেলে আসা শৈশবে, নতুন যৌবনে। খুঁজে ফিরি সেইসব ফেলে আসা দিন, যখন সকালে কি দুপুরে প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে সেশন আরম্ভ হতো। বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি করা থেকে নানা বিষয়ে আলোচনা করা, কি হোমটাস্কের ব্যাপারে কথা বলা, পরীক্ষার আগের দুশ্চিন্তা কিংবা আজ ইস্টবেঙ্গল জিতবে কি মোহনবাগান - এমন সব আরও কতশত কাজ যে ছিল আমাদের কি বলবো।



স্কুলে ছাত্র ভর্তি হওয়া শুরু হলো ১৯৬৬ সাল থেকে, প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে। গায়ে সরকারি স্কুলের একটা তকমা আছে বলে তার কদর বেড়ে গেল সবার কাছে। শুধু বাঙুর নয়, আশেপাশের অঞ্চল থেকেও ছেলেরা আসতে থাকলো। ভালো ভালো শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যোগ দিলেন। আর ছিলেন আমাদের তখনকার হেডস্যার, স্বর্গীয় জনার্দনবাবু, যাঁকে আমরা (মানে আমাদের ব্যাচ) ১৯৭৬ সাল অবধি দেখেছি। তাঁর অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব ও ছাত্রবৎসলতার পরিচয় পেয়েছি বার বার। যিনি কোন ছাত্র দুই-তিন দিন অনুপস্থিত আছে দেখলে যেমন তার বাড়ি অবধি খোঁজ নিতে চলে যেতেন, তেমনি কেউ ভালো কিছু করলে ভীষণ আনন্দিত হয়ে পড়তেন। একজন প্রকৃত অর্থে হেডমাস্টার মশাই বলতে যা বোঝায়। আমাদের অনেকের জীবনে ওঁনার স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে। এছাড়াও অন্য অনেক শিক্ষক মহাশয়ের কাছেও কতকিছু শিখেছি, আমাদের জীবনের সুষ্ঠু গোড়াপত্তনে তাঁদের অবদান অসামান্য। যেমন বিনয়বাবু - উনি আমাদের ইংরাজী পড়াতেন। আমি প্রচুর বই পড়তাম শুনে আমার ক্লাস সেভেন ও এইট-এ পড়ার সময়ে নিজে থেকেই ওঁনার কতো ইংরাজী গল্পের বই এনে আমাকে পড়তে দিতেন তার সংখ্যা নেই। তার ফলে ইংরাজীর ওপর আমার দখলের অনেক উন্নতি হলো। মানে, একটা দারুন সুন্দর স্কুল-জীবন আমরা কাটিয়েছি বলে আমরা সবাই গর্বিত হই।

পরে কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও আমাদের অনেকেরই ক্ষীণ যোগাযোগ ছিল শুধুমাত্র নিজের নিজের শ্রেণীর কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে। আমার নিজের মনেও মাঝে মাঝে তাই একটা বিদ্যালয় প্রাক্তনীদের সমিতি তৈরির কথা অনুরণিত হতো। কাজেই ২০১১ সালে যখনই খবর পেলাম যে, স্কুলে তেমনই একটা সমিতির আয়োজন করার চেষ্টা চলছে, আমি ভীষণ আনন্দিত হলাম। আমি কারোর নাম আলাদা করে লিখছি না, কারণ স্বল্প পরিসরের জন্য যারই নাম বাদ যাবে, সে-ই খুব দুঃখ পাবে। সেটা আমি চাই না। কিন্তু যারা সেদিন এই গুরুদায়িত্ব নিয়ে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলন করিয়েছিল তাদের অসাধারণ অবদানের কথা মনে রাখতেই হবে। কিভাবে এবং কত শ্রম, সময় এবং অধ্যবসায় দিতে হয়েছিল তা তারাই জানে। আমরা যারা সাধারণ সভ্য - আমরা এইসূত্রে স্কুলের ভিতর ঢুকে কতদিন পরে কত পুরোনো শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের দেখতে পেলাম, কতজন সহপাঠীকে কাছে পেলাম - সে আনন্দের ইয়ত্তা নেই। আর প্রথম মিলনোৎসব আশাতীতভাবে সাফল্যমণ্ডিত হওয়ায় পরের বছরগুলোয় এই মিলন উৎসবের আয়োজন করাটাও খুব সুবিধের হলো। পরের বছরগুলোয় সবাই সাধ্যমতো এতে যোগ দিত। তাছাড়া তৎকালীন স্থানীয় পৌরপ্রতিনিধি এবং স্কুলের প্রাক্তনী শ্রী মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য-ও বহু সাহায্য ও সহযোগীতা করে দিতেন উৎসবের আয়োজনের। এর মধ্যে ২০১৬ সালে স্কুলের ৫০ বছর পূর্তি-র উৎসব আলাদা করে না করলেও আমরা আমাদের মতন করে তা উদযাপন করলাম। দূরদর্শন থেকে সেই সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের একটা খবরও সম্প্রচার করা হলো।

আমরা ২০১৬ সালেই দায়িত্ব পেলাম এই সমিতির। প্রথম দিকে যদিও সম্মিলনীর আয়োজন করাটাই আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল, পরের বছর থেকে সদস্যরা আমাদের আরেকটা দায়িত্ব দিলেন - সমিতির নিবন্ধীকরণ করার। আগেও নাকি এই চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কোনো অজানা কারণে সেটা সেসময়ে করা সম্ভবপর হয়নি। আমাদেরও নানা কারণে বিশেষ করে এবিষয়ে অনভিজ্ঞতার দরুন সেটা করতে প্রায় দু'বছর সময় লাগলো। পদে পদে বাধা দেওয়ার লোকের যেমন অভাব হয়নি, তেমনি কতো লোক যে আমাদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন সেটাও বলা মুশকিল। আবার এমন লোকও ছিলেন যাঁরা শুরুতে আমাদের বিরোধিতা করেছিলেন, পরে তাঁরাও আমাদের সৎ উদ্দেশ্য বুঝে নিজেরাই এগিয়ে এসে সমস্যার জট খুলে দিতেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক শ্রী সুজিত বসু মহাশয়ও আমাদের কথা শুনে এই ব্যাপারে নির্দ্বিধায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আর এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন প্রধান, শ্যামলবাবু এবং স্কুলের তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্করবাবু মহাশয়, এর পরে স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শ্রী সঞ্জয় বড়ুয়া মহাশয় - এঁনারাও সানন্দে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলে আমরা আজ একটি সরকারী মান্যতাপ্রাপ্ত স্বশাসিত সংস্থায় উপনীত হতে পেরেছি।

এরপর কাজ ছিল যে যত শীঘ্র সম্ভব একটা সাধারণ বার্ষিক সভা ডেকে নতুন গভর্নিং বডি নির্বাচন করে তাঁদের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করা। যাতে তাঁরাই নিয়ম মাফিক সম্মিলনীর আয়োজন করতে পারে। কিন্তু অপ্রত্যাশিত লকডাউন-এর ফাঁসে সেটা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই সুযোগে আমরা তাই সমিতির নামে 'প্যান কার্ড' করা, নতুন 'ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট' করা, পুরোনো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে পড়ে থাকা অর্থগুলো নতুন অ্যাকাউন্টে আনার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি জরুরি এবং বকেয়া কাজগুলো করে নিলাম। স্কুলের কাছে একটা ঘরও চেয়ে রেখেছি, আমাদের প্রাক্তনী সমিতির অফিস-এর কাজে ব্যবহারের জন্য।

শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের মধ্য নভেম্বরে লকডাউন উঠে গিয়ে স্কুল খোলার খবর পাওয়ায় আমরা গত অক্টোবর থেকেই সদস্য সংগ্রহের কাজ আরম্ভ করি। নিয়ম মাফিক বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়, স্কুলের মধ্যে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১-এ রেজিস্ট্রেশনের পরে প্রথম সাধারণ বার্ষিক সভার আয়োজনের। সেইমতো যেসব রেজিস্টার্ড সদস্য সেদিন প্রচুর উৎসাহ নিয়ে উপস্থিত হয়, তাঁদের নিয়ে প্রথমবার আমাদের সমিতির বার্ষিক সভা আয়োজিত হয়। সেসবের অফিসিয়াল কার্য বিবরণী অন্যত্র দেওয়া হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রী অভিজিৎ ঘোষাল মহাশয় জানালেন যে, যেহেতু একটাই প্যানেল জমা পড়েছিল তাই তারাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছে।

সবার শুভেচ্ছা নিয়ে এই নতুন সমিতির কাজ আরম্ভ হোক। বিরোধী পক্ষও থাকা চাই, যাঁরা গঠনমূলক সমালোচনা করুক, যাতে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত অসূয়া নিয়ে কথা বলা যাবে না। ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের মঞ্চ এটা নয়। সে দায়িত্ব আমরা নেবো না।

এই ওয়েবসাইটটি আমাদেরই এক প্রাক্তনী তৈরি করে দিয়েছে। তাঁকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার কথা এখানেই শেষ করছি। আশা করি আমরা শুরুটা করে দিয়েছি। পরের সদস্যরা আরও এগিয়ে যাবে। সারা বছরে শুধু একটা এক বা দু'দিনের প্রাক্তনী সম্মেলন করাই নয়, অন্য আরও অনেক কাজ করা যেতে পারে আমাদের এই স্কুলের জন্য। অবশ্যই তা স্কুলের অনুমতি সাপেক্ষে। আমাদের লব্ধপ্রতিষ্ঠিত প্রাক্তনীরাও এতে যোগ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে স্কুলের একটা অহঙ্কারের বস্তু হিসাবে তুলে ধরবে বলে আশা রাখি। আজকের ছাত্র কালকের প্রাক্তনী - এই হিসাবে বর্তমান ছাত্রদের সামনে আমাদের এই সমিতির একটা কার্যকরী ভূমিকা থাকতে হবে যাতে পাস করে বেরিয়ে অন্যত্র চলে গেলেও তারা এই সমিতির সভ্য হবে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম যোগদান করে এই প্রাক্তনী সমিতিকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।


নমস্কারান্তে,

প্রতীপ কুমার মুখোপাধ্যায়
সহ-সভাপতি
প্রাক্তনী সমিতি - নারায়ণ দাস বাঙ্গুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুল (রেজিস্টার্ড)


২৮/১২/২০২১





2024 The Alumni Association of NDBMM School (Registered).