ভীম ভবানী...
দীপালোক দত্ত
[১৯৯৭, মাধ্যমিক]
সেদিন অফিসের কাজে মেদিনীপুর থেকে ফিরে শরীরটা যেন কিরকম ছেড়ে দিয়েছিল। আমার ডাক্তার বন্ধুকে বলতে কোভিড, ডেল্টা আর ওমিক্রন নিয়ে এত কিছু বলে দিল যে, মাঝখান থেকে একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। আসলে টিভিতে ও এভাবে বলে অভ্যস্ত বলে আমাকেও ওই একইভাবে ভয় দেখালো।
যাই হোক, এই শরীর নিয়ে বেশী এক্সপেরিমেন্ট না করে কয়েক দিন ছুটি নেওয়া ঠিক করলাম।
ভাবলাম এই কয়েক দিন বাংলার কিছু কৃতি মানুষের গল্প পড়ব, যাদের আজকের জেনারেশনের কেউ জানেনা বা খোঁজও রাখেনা।
সেখান থেকেই খুঁজে বের করা এই ভবেন্দ্র মোহন সাহা-কে, বাংলার কুস্তি সমাজের এক বিস্মৃতপ্রায় নাম।
বিশ শতকের শুরুর দিকের কথা, ভারতপ্রসিদ্ধ কুস্তিগীর রামমূর্তি নাইডু আসেন কলকাতায় খেলা দেখাতে। ভবেন্দ্রমোহনও যান। ভবেন্দ্রকে দেখে রামমূর্তি অভিভূত হয়ে নিজের সার্কাস দলে যোগ দিতে বললেন। বাবা মারা গেছেন আর মা-ও অনুমতি দেবেন না, তাই একদিন মাঝরাতে বাড়ি থেকে পালালেন।
এই সময় বিভিন্ন কুস্তি প্রতিযোগিতায় অনেক কুস্তিগীরদের পরাজিত করেন ভবেন্দ্র।
ভবেন্দ্রর আস্তে আস্তে ভালোই নামডাক হয়, পরিচিতি বাড়ে ডাকনাম 'ভবানী' নামে। গুরুর থেকে শিষ্যের নাম বেশী হয়ে যাওয়ায় ছাড়তে হয় রামমূর্তির সার্কাসের দল, যোগ দেন 'হিপোড্রাম' সার্কাস-এ। এখানেও অল্প দিনে বেশ ফেমাস হয়ে ওঠেন 'ভবানী'।
ভবানী তখন দু'হাতে দুটো চলন্ত মোটর সাইকেল থামিয়ে দিতেন। সিমেন্টের পিপের ওপর ৭ জন লোককে বসিয়ে দাঁতে চেপে শূন্যে ঘোরাতেন। বুকে ৪০ মণ পাথর চাপাতেন। দেশে ফিরে এসেও নানা জায়গায় খেলা দেখাতেন ভবানী।
ভরতপুরের মহারাজের কথায় তিনটে চলন্ত মোটরগাড়িকে তিনি দড়ি দিয়ে টেনে রাখেন।
নবাব বাহাদুরকে খুশি করতে বুকের ওপর তুলেছিলেন বুনো হাতি। নাম হওয়ার সাথে সাথে পুরষ্কারও জুটতে থাকে প্রচুর।
তাঁর শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে জাপানের সম্রাট তাঁকে স্বর্ণপদক পুরস্কার দেন। ভরতপুরের মহারাজা দেন এক হাজার টাকা। তার কাণ্ড বাংলার তৎকালীন গভর্নরকেও হতবাক করে দেয়।
স্বদেশী মেলার সময় তাঁর শক্তি প্রদর্শনের খেলা বিপ্লবীদের কাছেও দারুন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁদের দেওয়া নাম 'ভীম ভবানী' নামেই তার আরও পরিচিতি বাড়তে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান 'ভীম ভবানী' ওরফে ভবেন্দ্র মোহন।
১৯২২ সালে বাংলা হারায় তার এই কৃতি সন্তানকে।
প্রকাশকালঃ জানুয়ারি, ২০২২