সেই বাড়িটা
প্রতীপ মুখোপাধ্যায়
[১৯৭৬, উচ্চ মাধ্যমিক]
সেই যে বাড়িটা, যেটা আমাদের সময়ে একটা হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি ছিল, যেটাকে দেখলে আমার ইংরাজি 'L' আকৃতির মনে হতো, আর আমাদের প্রথম জীবনের কতটা সময় যে এতে কাটিয়েছি... আজও সেটা চলার পথে হঠাৎ দেখতে পেলে যে কতটা স্মৃতিকাতর হই তা আর কী বলবো? সে সময় বাড়ীর গঠনটা ইংরাজি 'L' অক্ষরের মতো ছিল যার মানে 'Learning' বলে মনে হতো আমার, যা পড়াশোনা করার জায়গা বা আসলে বিদ্যালয়কেই নির্দেশ করছে আর কী। আর তার দু'দিকের মাঠগুলো - পাঁচিলের ভেতরের কথা বলছি টিফিনের সময়ে কতই না হইচই ছোটাছুটি করতাম আমরা, এর স্মৃতিও কি কম? তাই আমরা (মানে আমার ক্লাসের বন্ধুরা) আমরা আজকাল এই বাড়িটায় যেতে পারলেই ঘুরে ঘুরে দেখি কোনটা আমাদের ক্লাসরুম ছিলো, কে কার পাশে বসতো, কোন ক্লাসে কোন স্যারের কাছে কে, কবে এবং কেন পেটানি খেয়েছিলো, কোন রাসায়নিকের নাম কে ভুল বলেছে সেইসব ছোটবড় জিনিস নিয়ে আজও মতামত বিনিময় করি। সবাই যেন সময়-ভ্রমণ করে সেই সুদূর বাল্যকালে ফিরে যাই। খেলোয়াড়দের ছবি কেটে রাখা, ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে ক'টা গোল দিল এগুলো নিয়ে ঝগড়া করা, আবার এমন কি, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাড়ার সমবয়সীনীদের দিকে চকিত চাহনীতে দেখা আর তারাও কিভাবেই বা প্রতিক্রিয়া দিত - ক্লাসে এইসব আলোচনাও গভীর আগ্রহে করা হতো এইসব ঘটনাও দেখি সবার ঠিক মনে পড়ে যায়। সে সব কত ঘটনা যে মনে ভীড় করে আসে, যেন ফের তরুণ হয়ে যাই আমরা। সময়ের ধূসর পর্দা সরিয়ে আমরা চেয়ে দেখার চেষ্টা করি আমাদেরই ছোটবেলাকে, সেইসব সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরা প্রাণচঞ্চল একদল ছোট ছোট ছেলেকে। আর এই সঙ্গে মনে করে দেখো, এই সময়েই আমরা যা শিখেছি তাই আমাদের পরবর্তী জীবনের ভিত্তি হিসাবে কাজে লেগেছে তা সে সাহিত্যই হোক, কি বিজ্ঞান, কি অর্থশাস্ত্র যে বিষয়ই হোক। এ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল আমাদের বাকী জীবনের জন্যে। আমরা প্রায় কেউই স্কুলের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদানটা মনে রাখি না।
কাজেই সব প্রাক্তনীকেই সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি পুনর্মিলনের দিনে সবাই এসো। যারা তাদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছ, তারা তো বটেই, অন্যরাও আসবে নিশ্চয়। যত পারো নিজের নিজের সহপাঠীদেরও ডেকে নাও, যাতে সবাই মিলে আনন্দটা খুব বেশী হয়। তোমাদের ভালো লাগলে নাম নথিভুক্ত করিও। সবাই এসো। আমার মতে এই পুনর্মিলন উৎসবটা যেন প্রাক্তনীদের কাছে দুর্গোৎসবের মতো। প্রবাসীদের ঘরে ফেরার মতো একটা বাৎসরিক প্রতীক্ষিত মুহুর্ত। বহুদিনের না-দেখা প্রিয়জনের সঙ্গে মিলে একটা হইচই করার সময় মাত্র। তা ভালো করে আনন্দ করো, কেবল একটু খেয়াল রেখো যাতে আমাদের কোনো ভুল পদক্ষেপ যেন আমাদের তথা স্কুলের বদনামের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। আর কুরুচিকর মন্তব্য ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করা চলবে না কোনওমতেই। ব্যাস।
প্রকাশকালঃ জানুয়ারি, ২০২৪